তথ্য প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে প্যাসিভ ইনকামের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল প্রিন্ট অন ডিমান্ড। প্রিন্ট অন ডিমান্ড কথাটি শুনেই বুঝতে পারছেন যে এখানে কাষ্টমারের ডিমান্ড অনুসরণ করে কাজ করার একটি বিষয় রয়েছে। বিভিন্ন পণ্য যেমন টি শার্ট, মগ ,বই ,ক্যানভাস,ক্যাপ,হুডি ইত্যাদি এর উপর বিভিন্ন ডিজাইন তৈরী করে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এ বিক্রি করাকে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বলে। বর্তমান সময়ে নিজের কিছু ক্রিয়েটিভ আইডিয়া, কর্ম দক্ষতা ও কিছু টিপস জানা থাকলে খুব সহজেই যে কেউ এই পেশাকে প্রফেশন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন । আপনি যদি জেনে থাকেন অনলাইনে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাইটগুলোকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজের একটি প্যাসিভ আয় তৈরী করা যায় তবে আপনি ক্যারিয়ারে খুব সহজেই বাকি সবার থেকে দুই থেকে তিন গুন ভাল করতে পারবেন। অনলাইনে নিজের একটি প্রফিটেবল বিজনেস গড়ে তুলতে তাই জেনে নিন প্রিন্ট অন ডিমান্ডে সফল হতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও রির্সোস সমূহ:
১. প্রসেসটা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা
সফলভাবে কোন কাজ করতে গেলে তা একটি নিয়ম মেনে করা উচিত।প্রত্যেকটি কাজের একটি নিয়ম রয়েছে যাকে SOP (Stanadard Operational Procedure) বলা হয়ে থাকে। চলুন দেখে নেয়া যাক প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড এই পুরো প্রক্রিয়াতে সফল হতে হলে কোন ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
২. প্রফিটেবল নিশ সিলেক্ট করা
সত্যি বলতে গেলে আমরা মার্কেট রিসার্চ না করেই ডলার আয় করা নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকি যেটি সম্পূর্ণ ভূল ধারণা। প্রিন্ট অন ডিমান্ড নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনাকে প্রথমেই যে জিনিসটি মাথায় রাখতে হবে তা হল নিশ বা টপিক। আপনি যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন সেটি যেন অবশ্যই প্রফিটেবল হয়। তাইলে এবার আসা যাক প্রিন্ট অন ডিমান্ড আপনি কোন বিষয় গুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনঃ
প্রিন্ট অন ডিমান্ডের জন্য জনপ্রিয় প্রডাক্ট সমূহঃ
- টি-শার্ট
- মগস
- হুডিস
- তোয়ালে
- নোটবুক
- ফোন কভার
- স্টিকার
- স্টেশনারি
- প্রিন্ট
- ব্যাগ
৩. প্রডাক্ট নিয়ে রিসার্চ করা
নিশ বা টপিক সিলেক্ট করে ফেলার পরে আমাদের কাজ হল আমরা যে নিশটি নিয়েছি সেটি উপর ভিত্তি করে প্রডাক্ট নিয়ে রিসার্চ করা। এই পর্যায়ে আপনি জনপ্রিয় প্রিন্ট অন ডিমান্ড সাইট গুলো ঘুরে দেখতে পারেন। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
- Printful.
- Printify.
- Zazzle.
- Redbubble.
- Fine Art America.
- TeeSpring.
- Society6.
- Sunfrog.
- Teefury
- Threadless
উপরের মার্কেটপ্লেস গুলোতে গিয়ে আপনি খুব সহজেই আপনার নিশ নিয়ে প্রডাক্ট রিসার্চ করতে পারেন। একটি কথা সব সময় খেয়াল রাখবেন আপনার তথ্য ভান্ডারে যত বেশি তথ্য থাকবে আপনার জন্যে প্রিন্ট অন ডিমান্ডের এই যাত্রাটি তত সহজ হবে।
৪. মার্কেটের টপ ডিজাইন গুলো দেখা
কাজ শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে মার্কেটের টপ রেটেড ডিজাইনাররা কেমন ডিজাইন করে। কোন সময়ে কোন ডিজাইন বেশি চলে। বর্তমানে যে সকল ডিজাইন অধিক জনপ্রিয় সেই সকল ডিজাইন গুলো কোন মেট্রিকে করা। মার্কেটে নতুন হলে এই বিষয় গুলো আপনাকে বাকি সবার চেয়ে কয়েকগুন সামনে এগিয়ে দিবে। টপ ডিজাইন গুলো দেখার মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার নিজের জন্য একটি বাস্তবমুখী গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।যা আপনাকে নিজের প্রডাক্ট ডিজাইন করার সময় অনেক সাহায্য করবে।
৫. নিজের ডিজাইন তৈরী করা
নিশ সিলেক্ট করে প্রডাক্ট নিয়ে রিসার্চ করে টপ ডিজাইন দেখার পর আমাদের কাজ হল নিজের জন্য ডিজাইনের কাজ শুরু করা। শুরুতে আমাদের কাজ হবে যত বেশি পারা যায় নতুন নতুন ডিজাইন তৈরী করে মার্কেটপ্লেসে আপলোড করা। এভাবে এ্যাকাউন্ট যখন অনেক গুলো ডিজাইন হয়ে যাবে তখন সেখান থেকে প্যাসিভ ইনকাম আশা শুরু হবে। নিজের ডিজাইন তৈরী করতে গিয়ে আপনাকে সব সময় মার্কেটের টপ ডিজাইন গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে রিসার্চ করতে হবে।
৬. ডিজাইন আপলোড করে মার্কেটিং করা
যদি আপনি প্রিন্ড অন ডিমান্ডে সাফল্য পেতে চান তবে মার্কেটপ্লেসে শুধু প্রডাক্ট আপলোড করে বসে থাকলে হবে না। প্রডাক্ট আপলোড করার পর তার মার্কেটিং করা প্রয়োজন। এখানে আপনি অর্গানিক ও পেইড দুইভাবেই মার্কেটিং করতে পারেন। শুরুতে আপনার মার্কেটিং বাজেট তেমন না থাকলে আপনি অর্গানিক মার্কেটিং করার জন্য ইনস্টাগ্রাম, প্রিন্টারেষ্ট, ইউটিউব এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলো ব্যবহার করতে পারেন। পেইড মার্কেটিং এর জন্যে ফেসবুক এড অধিক জনপ্রিয়। অর্গানিক মার্কেটিং করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল এসইও।আপনি জেনে অবাক হবেন ২০২০ সালে প্রিন্ট অন ডিমান্ডের মার্কেট সাইজ ছিল ৮২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ( সূত্র :smithers.com) ।যা এই বছরে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রিন্ট অন ডিমান্ড এই সেক্টরে কাজ করে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০০$-৪০০০$ আয় করা সম্বভ। উপরের উল্লেখিত ৬টি ধাপ মেনে কেউ যদি প্রিন্ট অন ডিমান্ডে কাজ শুরু করে তবে তার সামনে এগিয়ে যাওয়া বাকিদের থেকে অনেক সহজ হবে যাবে। একটি কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে আর তা হল যত বেশি তথ্য মাথায় থাকবে যত বেশি রিসার্চ করা হবে সামনে এগিয়ে যাওয়া তত সহজ হবে।
৭. মার্কেটের ট্রেন্ড ফোলো করা
নতুন নতুন ডিজাইন করার সময় সব সময় মার্কেট ট্রেন্ড ফোলো করা উচিত। মার্কেট এর ট্রেন্ড অনুযায়ী কাজ করলে সেল কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়। যে কোন কাজে ডিজাইন ক্ষেত্রে যদি এমন ডিজাইন করা যায় যা ওই সময়ে মার্কেটের ট্রেন্ডিং এ রয়েছে তবে সেখান থেকে ভাল একটা ট্র্যাকশন আসে। মার্কেট এর ট্রেন্ড গুলো বোঝার জন্যে যা করা্র করতে হবে তা হল মার্কেটের ট্রেন্ডিং বিষয় গুলোর উপর নজর রাখতে হবে। কোন সময়ে কোন প্রডাক্ট বেশি চলে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। এভাবে ট্রেন্ডিং অনুযায়ী কাজ করলে খুব সহজেই বাকি সবার থেকে এগিয়ে থাকা যাবে।
৮. মার্কেট রিসার্চের জন্য বিভিন্ন টুল ব্যবহার করা
মার্কেট রিসার্চের জন্যে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন কি-ওয়ার্ড রিসার্চের জন্যে কি-ওয়ার্ড প্ল্যানার খুবই সহায়ক। কি-ওয়ার্ড প্ল্যানা্র এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রডাক্টের জন্যে সঠিক কি-ওয়ার্ড নির্বাচন করতে পারবেন। আপনি জানতে পারবেন কোন কি-ওয়ার্ড দিয়ে আপনার প্রডাক্টের জন্যে সবচেয়ে বেশি সার্চ হয়। এরপর আপনি সেই কি-ওয়ার্ড দিয়ে গুগল এড বা সার্চ এড দিলে আপনার বিক্রি বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া মার্কেট এর ট্রেন্ড বোঝার জন্যে গুগল ট্রেন্ডস খুবই কার্যকর। গুগল ট্রেন্ডস একটি এলাকার সার্চের পরিমাণ বের করার সাইট, যা দেখায় যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো এলাকার মানুষজন কোনো একটি বিষয় নিয়ে মোট কী পরিমাণ গুগলে সার্চ করছে । গুগল ট্রেন্ডস কে বর্তমানে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ এর জন্য এবং পাশাপাশি নিজের ব্লগ, অ্যামাজন এফবিএ, প্রিন্ট অন ডিমান্ড বা ওয়েবসাইটে ভিসিটর বাড়ানোর জন্যে ব্যবহার করা হয়।গুগল ট্রেন্ডস অনুসন্ধানের ভলিউম সূচক এবং অনুসন্ধান ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে ভৌগলিক তথ্য সহ কীওয়ার্ড-সম্পর্কিত ডেটা সরবরাহ করে।
উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করে কাজ শুরু করলে আপনি খুব শীঘ্রই প্রিন্ড অন ডিমান্ডে নিজের একটি মজবুত ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তাই আর দেরি না করে এখনই শুরু করুন। উপরের ধাপ গুলো ফোলো করুন ,প্রচুর চর্চা করুন, নতুন নতুন বিষয় শিখুন, সেগুলোর প্রয়োগ করুন। সফল আপনি অবশ্যই হবেন।