আপনারা যারা ডিজিটাল মার্কেটিং এ যুক্ত আছেন তারা সকলেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অর্থাৎ SEO এর সাথে পরিচিত। এসইও হলো যে পদ্ধতিতে আপনার ওয়েবসাইটের পেজকে একটা নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড এর ভিত্তিতে সার্চের মাধ্যমে গুগল, ইয়াহু, বিং সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে প্রথম পর্যায়ে অবস্থান করানো হয়। বেশিরভাগ অনলাইন মার্কেটগুলো গুগল সার্চ ইঞ্জিনকে টার্গেট করে এসইও করে থাকে। যদি সহজ ভাষায় বলতে হয় তাহলে বলা যায় যে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনার জন্য এই কাজটি করে হয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিনে নির্দিষ্ট কিছু খুজতে গেলে গুগল আমাদের নির্দিষ্ট কোন উত্তর বা তথ্য দিয়ে দেয়।
এখন প্রশ্ন হলো সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
আপনার যেকোনো ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি পেজ ভিজিট করার মাধ্যমে সকল প্রকার ডাটাবেজ গুগল সার্চ ইঞ্জিন রোবট তাদের ডাটাবেজে সেভ করে রাখে এবং পরবর্তীকালে যখন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করা হয় তখন ইনডেক্সড ডাটা থেকে রেজাল্ট গুলো আমাদের সামনে চলে আসে। আজকের এই প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এসইও এর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। এসইওর মাধ্যমে আপনার পণ্যকে গুগল সার্চের সবচাইতে উপরে নিয়ে আসবেন, তাহলে আপনার পণ্যের বিক্রিও বৃদ্ধি পাবে কারন বর্তমানে মানুষ কোন পণ্য কেনার আগে গুগল থেকে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। একইসাথে আপনার পণ্যের সম্পর্কে সে জানতে পারবে। তবে এসইও এর ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলো কখনও ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ব্যবহার করা যাবে নাহ। এক্ষেত্রে এটি খুব ক্ষতিকর।
সার্চ রেজাল্ট দুই ধরনের আছে, Organic এবং Paid আমরা এখন organic search result নিয়ে কথা বলব কারণ এটি ফ্রি এবং paid search result এটা তে টাকা খরচ করলেই এড দেয়া যায়। সার্চ ইঞ্জিন প্রধানত দুইটি component নিয়ে কাজ করে থাকে। একটি হলো Crawler- এটির প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য কালেক্ট করা। যেমন- robot,bot এর মাধ্যমে। Algorithm– এখানে search engine প্রাপ্ত information গুলো বিশ্লেষণ করে, বিভিন্ন page এর content এর relevancy ও quality অনুযায়ী ranking প্রদান করে। SEO এর Algorithm অনেক factor এর উপর নির্ভর করে।
ব্লাক হ্যাট –
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন মানেই সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানো। তবে সেটা সার্চ ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে করতে হয়। কিন্তু ব্ল্যাকহ্যাট এসইও সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইনের তোয়াক্কা না করে শুধু র্যাংক করানোর উদ্দেশ্যে কাজ করা হয়। তাই ব্ল্যাকহ্যাট এসইও
পদ্ধতি সার্চ ইঞ্জিন স্বীকৃত নয়। সার্চ ইঞ্জিনকে ধোঁকা দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য সাইট র্যাংক করানো সম্ভব হলেও তা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়না। ব্ল্যাকহ্যাট এসইও না করাই ভালো।
হোয়াইট হ্যাট এসইও-
সার্চ ইঞ্জিন স্বীকৃত এসইও পদ্ধতি হলো হোয়াইটহ্যাট এসইও। সার্চ ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ করা হয় হোয়াইট হ্যাট এসইও মেথডে। ফলে এই পদ্ধতিতে সাইট র্যাংক করানো সম্ভব হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর হয়ে থাকে। হোয়াইটহ্যাট এসইও -এর আবার ২টি অংশ।
অনপেজ অপটিমাইজেশনঃ
হোয়াইটহ্যাট এসইও বলতে একটি ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরীন গঠন এসইও ফ্রেন্ডলি করা। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন গাইডলাইন মেনে সাইটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করা। যেমনঃ সাইট ম্যাপ, কি ওয়ার্ড, মেটা ট্যাগ, পোস্ট অপটিমাইজেশন, ইউআরএল স্ট্র্যাকচার ইত্যাদি।
অফপেজ অপটিমাইজেশনঃ
সাইটের বহির্ভূত এসইও সংক্রান্ত কাজগুলোকে অফপেজ অপটিমাইজেশন বলে। অফপেজ অপটিমেইজেশনের কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ লিংক বিল্ডিং, সোশ্যাল বুকমার্কিং, গেস্ট ব্লগিং, ফোরাম পোস্টিং।
কিওয়ার্ড ও ট্যাগ গবেষণাঃ
কিওয়ার্ড রিসার্চ এসইওর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। গুগল থেকে কিওয়ার্ড প্ল্যানার ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ নির্বাচন করে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা যায়। অনেক পেইড সার্ভিসও আছে। ওয়েবসাইট ও কাজের ব্যাপ্তির ওপর নির্ভর করে ফ্রি ও পেইড সার্ভিস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন এসইও প্লাগইন পাওয়া যায়। যেমন ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে ইয়স্ট এসইও প্লাগইনসহ অন্যান্য প্লাগইন ব্যবহার করা যায়। ইউটিউবের জন্য ট্যাগ রিসার্চ করতে হয় এবং ভিডিও বিবরণ ভালোভাবে দিতে হয়। ইউটিউবের ট্যাগ রিসার্চে TubeBuddy আথবা VidIQ–এর মতো টুলগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
কেন করবেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও?
একটি ওয়েব সাইটের মূল প্রাণ হলো ভিজিটরস। ভিজিটরস বিহীন ওয়েবসাইটের কোন মূল্যই নেই। আপনি আপনার ব্লগ সাইটে হাজারটা মানসম্মত পোস্ট লিখুন না কেন, কিন্তু সেই পোস্টগুলোর পাঠকই যদি না থাকে তবে কি আপনার লেখা সেই পোস্টগুলোর কোন সার্থকতা থাকবে? অবশ্যই না! আর তাইতো প্রত্যেক ওয়েবমাস্টাররাই তাঁদের ওয়েবসাইটের জন্য ভিজিটর আনতে মরিয়া। কিন্তু কিভাবে আসবে সেই ভিজিটর? আমরা সবাই জানি, অনলাইনে কিছু খুঁজতেই আমরা চোখ বন্ধ করে গুগল, ইয়াহু, বিং এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সহায়তা নেই। আর তাই সার্চ ইঞ্জিন ভিজিটরসের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে স্বীকৃত। কোটি কোটি অনলাইন ইউজার প্রতিনিয়ত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সহায়তা নিয়ে খুঁজছে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত তথ্য। আর তাই সার্চ ইঞ্জিন সাইটে আপনার সাইটের তথ্য ভালো অবস্থানে র্যাংক করাতে পারলে আপনিও পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ভিজিটরসদেরকে। কিন্তু আপনি চাইলেন আর সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইট আপনার কাঙ্ক্ষিত ভিজিটরসদের সামনে তুলে ধরলো এমন কিন্তু না! কারণ, আপনার মতো সব ওয়েব মাস্টাররাই চান তাঁর সাইট ভালো অবস্থানে থাকুক। আর তাইতো এই এসইও প্রতিযোগিতা। আমাদের মাঝে আরেকটি ভুল ধারণা, আমরা মনে করি সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন মেনে এসইও করলাম আর সাইট ভালো অবস্থানে গেল। এটিও এক ধরণের ভুল ধারণা। কারণ, ওয়েব মাস্টাররা সবাই তাঁর সাইটকে এসইও ফ্রেন্ডলি করে গড়ে তোলে। কিন্তু এটাও একটা প্রতিযোগিতার মতো। যার এসইও যতো ভালো হবে তাঁকে সার্চ ইঞ্জিন তাঁর প্রাপ্য র্যাংকটাই দিবে। সবশেষে বলা যায়, সার্চ ইঞ্জিন থেকে কাঙ্ক্ষিত ভিজিটরস পেতেই এসইও এতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও এর সুবিধা:
উপরের আলোচনা থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারলাম আর্গানিক ভাবে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও কোন বিকল্প নেই। এবার আমরা জানব এসইও এর সুবিধা গুলো কী কী
- এসইও একদম ফ্রি এবং অর্গানিক।
- ভাল এসইও সব সময় ইউজারকে ভাল এক্সপিরিয়েন্স দেয়।
- এসইও কোয়ালিটিফুল লিড সংগ্রহের জন্যে খুবই ভাল কাজ করে।
- পেইড সার্চের চেয়ে এসইও ৬ গুন বেশি ভাল কাজ করে।
- এসইও ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততা বাড়ায়।
কীভাবে এসইও ক্যারিয়ার শুরু করবেন?
এসইওতে কাজ শুরু করতে চাইলে প্রথমে আপনি যেকোনো আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ক্লায়েন্টকে এসইও সেবা প্রদান করে। এতে করে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং আপনি বুঝতে পারবেন যে বর্তমানে এসইওর কাজ কীভাবে করা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া একটি সাইটের সম্পূর্ণ এসইও কীভাবে করা হয়, এ সম্পর্কেও জানতে পারবেন। কেননা, আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে সম্পূর্ণ এসইওর কাজ নাও পেতে পারেন। তাই এখান থেকে একটি ভালো ধারণা লাভ করতে পারবেন।
কিন্তু একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান আপনাকে অভিজ্ঞতা ছাড়া কাজে নিতে চাইবে না। হয় আপনার এসইও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, তা না হলে আপনার কোনো মানসম্মত প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। আপনি যেখান থেকে ট্রেনিং নিচ্ছেন, এর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু বা আপনাকে যিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাঁর জ্ঞানের পরিধি কতটুকু বা তিনি একজন প্রসিদ্ধ প্রশিক্ষক কি না, এ বিষয়গুলো লক্ষ করুন।
একটি ভালো মানের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাবে, তাহলে এটি আপনার কাজ পেতে অনেক সাহায্য করবে।
আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করার মাধ্যমেও আপনার এসইও ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। বর্তমানে এমন অনেক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে অসংখ্য এসইও রিলেটেড কাজ পাবেন। এখান থেকে আপনার পছন্দ/যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে বিড করে কাজটি করতে পারবেন। এখানে আপনি এসইওর বিভিন্ন অংশের ছোট/বড় অনেক কাজ পাবেন। এখানে কাজ করার মাধ্যমেও আপনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।